✍️ মাওলানা মহবুবুর রহমান।
ঈদুল আযহা—শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মানবতার এক অমোঘ আহ্বান, যেখানে আত্মত্যাগের মহিমা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। এই দিনে আমরা স্মরণ করি হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক ত্যাগের ঘটনা, যা আমাদের শেখায় সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মসমর্পণ কতটা মহৎ।
ইব্রাহীমি ত্যাগ ঈমানের শ্রেষ্ঠতম কাব্য। যখন হজরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে ক্বোরবানি করতে প্রস্তুত হন, তখন ইসমাঈল (আ.) বলেন, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন; ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা আস-সাফফাত: ১০২) এই সংলাপ কেবল দুটি চরিত্রের নয়, বরং এটি ঈমান ও আনুগত্যের এমন ব্যঞ্জনাময় দৃষ্টান্ত, যার আলো আজও কাঁপতে থাকা বিশ্বাসের আশ্রয়।
ক্বোরবানির প্রকৃত শিক্ষা: বাহ্যিক কৃত্য নয়, অন্তরের তাক্বওয়া। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া।” (সূরা হাজ্জ: ৩৭) এই আয়াতেই ঈদুল আযহার আধ্যাত্মিক দর্শনের সারাংশ নিহিত। ক্বোরবানির প্রকৃত রূপ—বাহ্যিক কৃত্য নয়, অন্তরের ইখলাস।
মানবিকতা ও সাম্যের প্রতীক
ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা আমাদের শেখায়—ত্যাগের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ক্বোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য, এবং এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য। এই বিধান শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিপূরক—যেখানে ধনীর সম্পদে দরিদ্রের অধিকার নিশ্চিত হয়, এবং একটি সমবেদনাপূর্ণ সমাজ নির্মিত হয়।
ঈদ শুধুমাত্র বাহ্যিক আনন্দের উৎসব নয়; এটি আত্মার শুদ্ধিকরণ ও মানবিক সংহতির এক মহৎ উপলক্ষ। ঈদে আমরা আমাদের অন্তরের পশুত্ব, অহংকার, হিংসা ও লোভকে ক্বোরবানি দিয়ে মানবিক গুণাবলী অর্জনের শপথ নেই। ঈদ আমাদের শেখায়—সত্যিকারের আনন্দ তখনই, যখন ত্যাগে আনন্দ আর শুদ্ধতায় মুক্তি খুঁজে পাই।
ক্বোরবানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল:
১।ঋণ থাকলেও, যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে ক্বোরবানী করা আবশ্যক।
২.নারীর কাছে যদি নেসাব পরিমাণ গহনা থাকে, তবে তার জন্য ক্বোরবানী ফরজ।
৩.ক্বোরবানীর জন্য নিয়ত করা জরুরি; নিয়ত ছাড়া ক্বোরবানী ইবাদত হিসেবে গৃহীত হয় না।
ঈদুল আযহা আমাদের শেখায়—ত্যাগের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আসুন, আমরা ঈদুল আযহাকে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে নয়, বরং মানবতার এক অমোঘ আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করি। ক্বোরবানী হোক কেবল পশুর নয়—আমাদের ভেতরের পাপ, অহংকার, হিংসা ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে এক দুর্বার প্রতিবাদ। ঈদের আলো ছড়িয়ে পড়ুক ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি হৃদয়ে। ঈদ হোক বিশ্বমানবতার মিলনমেলা, আল্লাহর প্রেমে সকল বিভেদের অন্তিম বিলয়। সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, মানবতা ও মহানুভবতা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। তাক্বাব্বাল্লাহু মিন্না ও মিনকুম। ঈদুকুম সায়ীদ।
🌹🌹🌹