![]() |
ইউসুফ আল-কারাযাভী |
তাকদিরের প্রতি ঈমানের উপকারীতা হচ্ছে যে, মানুষ সকল প্রকার চেষ্টা পরিশ্রম করার পর ও যদি পরাজিত হয়, তখন তার মধ্যে হতাশা দেখা দেয় না। বিপদে যখন পড়ে তখন ধৈর্য হারা হয় না। পরিশ্রম করার পর যা কিছু পায় সে পাওয়াকে আল্লাহর মর্জি ভেবে সন্তুষ্ট থাকে এবং ধৈর্য ধারণ করে। আল্লাহর শোকর আদায় করে।
আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী রাহিমাহুল্লাহ
ইউসুফ আল-কারাযাভী একজন প্রভাবশালী ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং ফকীহ ছিলেন যিনি সমকালীন ইসলামী আইন এবং সমাজবিজ্ঞানের উপর তার গভীর প্রভাব ফেলেছেন। তার লিখনী শুধুমাত্র ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনধারণের পথ দেখায়নি, বরং মুসলিম সমাজে সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও আধুনিক চ্যালেঞ্জের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপনের নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
ইউসুফ আল-কারাযাভী: পরিচয়
ইউসুফ আল-কারাযাভী ১৯২৬ সালে মিশরের সাফত তোরাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি নিজেকে ইসলামী জ্ঞানের একজন স্বনামধন্য চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি একজন বহুমুখী লেখক এবং বক্তা হিসেবে মুসলিম বিশ্বের চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেন।
ইউসুফ আল-কারাযাভী’র লেখনী
ইউসুফ আল-কারাযাভী’র লিখনী মূলত ইসলামী জীবনধারণের আধুনিক প্রাসঙ্গিকতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। তিনি ইসলামী আইন (শরীয়াহ) এবং এর আধুনিক প্রয়োগের উপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তার লেখাগুলি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে, যেমন অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
আন্তর্জাতিক সম্মাননা:
১) কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ।
২) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া
৩) আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই ।
৪) সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই ।
৫) আল ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ।
৬) জর্ডানের মেডেল অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স ।
বাংলায় অনূদিত ড. কারযাভীর বইসমূহ হলো:
১. ইসলামে হালাল হারামের বিধান
২.ইসলামের যাকাত বিধান (১ম ও ২য় খণ্ড)
৩. ইসলাম ও শিল্পকলা
৪. ইসলামী শরীয়তের বাস্তবায়ন
৫. আধুনিক যুগ : ইসলাম কৌশল ও কর্মসূচী
৬.ইসলামী পুনর্জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা
৭. দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম
৮. জেরুজালেম : বিশ্ব মুসলিম সমস্যা
৯. ফতোয়া
১০. ঈমান ও সুখ
১১. মুমিন জীবনে সময়ঃ মুসলিম মানসে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাবনা।
১২. মুমিন জীবনে পরিবারঃ একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবার গঠনে ইসলামি রূপরেখা।
১৩. ইসলামের ব্যাপকতা
১৪. আলিম ও স্বৈরশাসক
১৫. উমর ইবনে আবদুল আজিজ ( জীবনী)
১৬. সুন্নাহর সান্নিধ্যে
১৭. বুদ্ধিদীপ্ত জাগরণের প্রত্যাশায়
১৮. ইসলামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী
১৯. ইসলাম ও চরমপন্থা
২০. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ
২১. ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
২২. ইসলামে এবাদতের পরিধি
২৩. উপেক্ষা ও উগ্রতার বেড়াজালে ইসলাম।
বিখ্যাত বইগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম (ইসলামে হালাল এবং হারাম) – ইসলামের মূলনীতি এবং আধুনিক জীবনে তাদের প্রয়োগ সম্পর্কে।
2. ফিকহ উল-জিহাদ – জিহাদের সঠিক ধারণা এবং তার আইনত ব্যবহারের উপর আলোচনা।
3. ফিকহ উল-জাকাত – ইসলামী অর্থনীতির একটি কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে যাকাতের গুরুত্ব।
ইউসুফ আল-কারাযাভী’র লিখনী কীভাবে আমাদের জীবন পরিবর্তন করতে পারে
১. নৈতিক মূল্যবোধের উন্মেষ: তার লিখনীতে ইসলামের মূল শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ব্যক্তির নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যেমন, আল-কারাযাভী সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইবাদত এবং আচরণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন।
২. আধুনিক জীবনের দৃষ্টিকোণ: আধুনিক সমাজে ইসলামী আইন ও বিধান কিভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার চিন্তাভাবনা আধুনিক মুসলিম সমাজকে ইসলামের আলোকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ দিয়েছে।
৩. সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: তার লিখনীতে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যাকাত এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতিমালার ভূমিকার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তার ফিকহ উল-জাকাত বইটি ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
৪. মানবাধিকার ও স্বাধীনতা: ইউসুফ আল-কারাযাভী ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানবাধিকার এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তার মতে, ইসলামী আইন মানবাধিকারের রক্ষক, যা মানুষের মর্যাদা এবং সম্মান বজায় রাখে।
৫. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: আল-কারাযাভী বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে ছিলেন। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসলামী মূল্যবোধগুলি অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে এবং সঠিক ইসলামী জ্ঞানের মাধ্যমে কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ইউসুফ আল-কারাযাভী একটি উদার ও আধুনিক ইসলামী চিন্তাধারার প্রবর্তক হিসেবে আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তার লিখনী ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে ধর্মীয় চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে, নৈতিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করতে, এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইসলামের মূল শিক্ষা এবং আধুনিক জীবনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই তার লিখনীর মূল লক্ষ্য ছিল, যা মুসলিম সমাজের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে।
ইমাম মওদূদী: চিন্তাধারা ও তাজদীদ : আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী
ইমাম মওদূদী রহ. দেখলেন যে পরিবর্তনের যত পথ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবর্তন হচ্ছে চিন্তার পরিবর্তন বা নফসের পরিবর্তন, মানুষ তার ইচ্ছা ও চিন্তা দ্বারা পরিচালিত।
যখন মার্ক্সবাদীরা বলছে ” উৎপাদনের সম্পর্ক ও মাধ্যমগুলো বদলে দাও, ইতিহাস বদলে যাবে” তখন মওদূদী সেটাই দেখলেন যা কোরআন শিখিয়েছে ‘নিজেকে বদলাও ইতিহাস বদলে যাবে’
আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ ঐ জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করে না যতক্ষন না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে” (সূরা রা’দ-১১)
এজন্যই কাংখিত পরিবর্তনের জন্য মওদূদী সশস্ত্র বা উগ্রবাদকে প্রয়োজন মনে করেন নি এবং সামরিক অভ্যুত্থানের পথকেও পরিবর্তনের পথ হিসেবে গ্রহণ করেন নি।
নফল হজ্ব বা উমরার খরচকে আপনি যদি ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ফি লি স্তিনিদের সহযোগিতায়, সার্বদের মোকাবিলায় বসনিয়ান ভাইদের সহযোগিতায় কিংবা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে খ্রিষ্টান মিশনারিদের কার্যক্রম মোকাবিলায় খরচের জন্য বলেন, তখন দেখবেন তারা আপনার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে।
এছাড়াও দাওয়াহ সেন্টার প্রতিষ্ঠা, আদর্শ ও দক্ষ দাঈ তৈরি এবং ইসলামি প্রকাশনা ও অনুবাদকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তারা পুরোপুরিভাবে উপেক্ষা করে।
ইসলামের অগ্রাধিকার নীতি
আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী (রহ