![]() |
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَیۡكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
রমজান মুসলমানদের জন্য বরকতময় একটি মাস, রমজান হল তাকওয়া অর্জনের মাস, আত্মগঠনের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস। যেখানে আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ মেলে। রোজা শুধুমাত্র ক্ষুধা ও তৃষ্ণা থেকে বিরত থাকা নয়, বরং চোখ, কান, মুখ ও মনের রোজা রাখা। এটি কেবল রোজা রাখার মাস নয়, বরং ব্যক্তি ও সমাজের নৈতিক উন্নয়নের এক সুবর্ণ সময়। আত্মসংযম, ধৈর্য, দানশীলতা, ইবাদত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এক বিশাল প্রশিক্ষণ মাসে পরিণত হয় রমজান।
আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব ও রমজানের ভূমিকা
আত্মশুদ্ধি ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি সফলকাম, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করল।” (সূরা আশ-শামস: ৯)
যে আত্মাকে শিরক, অবাধ্যতা থেকে এবং চারিত্রিক অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করবে, সে পরকালে সফলতা ও মুক্তি লাভ করবে। আহসানুল বায়ান
রমজান এমন একটি মাস, যা একজন মুমিনকে আত্মশুদ্ধির পথ প্রশস্ত করে দেয়। সারা বছর নানারকম গুনাহ ও দুনিয়ার মোহে লিপ্ত থাকার পর রমজান আসে নতুন করে আত্মগঠনের সুযোগ নিয়ে। এই মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সংযমের চর্চা হয়, যা একজন মুসলমানের আত্মশুদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ করে দেয়।
রমজান: সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ
রমজান শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং এটি সকল প্রকার খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করার একটি প্রশিক্ষণ।
1. নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
রোজার মাধ্যমে ব্যক্তি তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও জৈবিক চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এটি মানুষের ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তিকে বৃদ্ধি করে, যা ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
2. চোখ, কান ও জিহ্বার সংযম:
প্রকৃত রোজা শুধু না খেয়ে থাকা নয়; বরং চোখ, কান, মুখ ও অন্তরের সংযমও এর অংশ। গীবত, মিথ্যা, অশ্লীলতা ও খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা আত্মশুদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন।
3. সোশ্যাল মিডিয়া ও সময়ের অপচয় রোধ:
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি এক বড় চ্যালেঞ্জ। রমজান আমাদের শেখায় কিভাবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হয়।
ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি
রমজানে আত্মশুদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায় হল ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।
1. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত:
এই মাসে পাঁচওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব। কুরআন নাজিলের মাস হওয়ায় এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতিদিন কুরআন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
2. দোয়া ও ইস্তিগফার:
রমজান এমন একটি সময়, যখন দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন:
“রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় একটি কবুলযোগ্য দোয়া রয়েছে।” (তিরমিজি: ২৫২৫)
তাই প্রতিদিন দোয়ার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন করা উচিত।
দান-সদকা: আত্মশুদ্ধির অন্যতম মাধ্যম
রমজান দানশীলতার মাস। এ মাসে দান-সদকা করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা সম্ভব।
1. অহংকার ত্যাগের শিক্ষা:
দান মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং অহংকার দূর করে। গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ঘটে।
2. যাকাত ও ফিতরা:
ইসলাম আমাদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের জন্য দান করতে নির্দেশ দিয়েছে। যাকাত ও ফিতরা আদায় করলে সমাজে ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং সম্পদের প্রতি অতি আসক্তি দূর হয়।
রমজানের শিক্ষা বছরজুড়ে বজায় রাখা
রমজানের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা শুধু এক মাসের জন্য নয়, বরং সারা বছর তা বজায় রাখা উচিত।
1. নামাজ ও ইবাদত অব্যাহত রাখা:
অনেকেই রমজানে নামাজে মনোযোগী হন, কিন্তু রমজান শেষে তা বাদ দেন। আসল চ্যালেঞ্জ হল এই অভ্যাসকে বছরের বাকি সময়েও ধরে রাখা।
2. ভালো অভ্যাস বজায় রাখা:
রমজান মাসে ফজর সময় ওঠার জন্য যে আমরা মোবাইলে Alarm লাগিয়ে রাখি সে Alarm যেন সারা বছর বেজে ওঠে।
ধৈর্য, সত্যবাদিতা, দানশীলতা, সংযম— এসব গুণ রমজান আমাদের শেখায়। সারা বছর এগুলোকে জীবনের অংশ করে নেওয়াই আত্মশুদ্ধির প্রকৃত লক্ষ্য।
রমজান আত্মশুদ্ধির এক বিস্তৃত প্রশিক্ষণ মাস। এটি আমাদের ধৈর্য, সংযম, দানশীলতা ও ইবাদতের মাধ্যমে একটি পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের সুযোগ দেয়। যারা এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারে, তারা প্রকৃত অর্থে সফল। রমজানের শিক্ষা যেন শুধু এক মাসের জন্য না হয়, সারা বছর রমজান মাসের প্রতিফলন যেন প্রতিফলিত হয়। আসুন, আমরা এই পবিত্র মাসকে আত্মগঠনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি এবং বছরের বাকি সময়েও এর শিক্ষা অব্যাহত রাখার সংকল্প গ্রহণ করি।