মানবতার বন্ধু হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)

 

মানবতার বন্ধু হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)!

মানবতার বন্ধু হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)!

লেখা: আরিফ সেখ 

যখন সমাজ তথা রাষ্ট্রে অপসংস্কৃতির শৈলা বয়ে যায়। নৃশংসতা ও হত্যালীলা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তখন সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য নবী আম্বিয়া (আ.)দের প্রেরণ করেন। আরব সমাজ যখন নগ্নতায় ভরপুর,  অনৈতিকতার চত্বরে হাবু ডুবু।দিনের ব্যাপারে উদাসীন।  সেই সময় রাসূল সাঃ এর আগমন ঘটে।এবং তিনি সমাজ সংস্কারের কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম ও বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এক নতুনভাবে সমাজকে  রূপান্তরিত করেছিলেন।তাঁর বিভিন্ন দিক গুলি হল ___

তাঁর মাক্কী জীবন:

কিছু উৎস অনুসারে মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং কিছু উৎস অনুসারে ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের আগে তার বাবা আব্দুল্লাহ  এবং ৬ বছর পরে তাঁর আম্মা আমিনা মারা যান। ব্যথিত হৃদয়ে শৈশবে তিনি  চারবাহা( মেষ পালন) করতেন । তাঁর জন্মের পর থেকে প্রথম ৫৩ বছর (আনু. ৫৭০ – ৬৩২ খ্রি.) মদিনায় হিজরত করা পর্যন্ত মক্কায় জীবনযাপন করেন। তার জীবনের এই সময়কালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে তার নবুয়ত।  পরবর্তীতে তিনি দাদা আবদুল মুত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের পরিচর্যায় বেড়ে উঠেন। মুহাম্মাদ তার কর্মজীবনের শুরুর দিকে রাখাল এবং বণিক হিসেবে অতিবাহিত করেছেন। সিরিয়ায় সফলভাবে ব্যবসা করার পর খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদকে বিবাহ করেন। খাদিজা এবং আবু তালিবের মৃত্যুর পর দুঃখের বছরের পরের বছর মুহাম্মাদ সাওদা এবং আয়িশাকে বিয়ে করেন।

মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মাদ ৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ওহী পেয়েছিলেন। প্রথমদিকে মুহাম্মাদের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়ই কেবল ইসলামগ্রহণ করেছিলেন। যদিও অন্যান্য আরো কিছু কুরাইশের লোক ও আরব গোত্রগুলোর সম্মানিত বেশ কিছু লোক তার কথা ও বার্তাকে গ্রহণ করেছিল; কিন্তু গোত্রের নেতৃবর্গ আর আবু লাহাবের মত তার কিছু আত্মীয়সহ বেশিরভাগই তার বিরোধিতা করেছিল। তাকে নিয়ে উপহাস করেছিল। এমনকি একপর্যায়ে তার গোত্র বনু হাশিমকে বয়কটও করেছিল। তার সাথীরাও হয়রানীর শিকার ছিলেন, লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এমনকি তার সাথীদের একটি দল আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। ৬২০ খ্রিস্টাব্দে মিরাজের ঘটনার পর মদিনার (তৎকালীন ইয়াসরিব) লোকদের একটি অংশ ইসলাম গ্রহণ করে। আকাবায় তাদের দুটি গোত্র (আউস এবং খাযরাজ) তাকে প্রতিরক্ষার ওয়াদা করে। মুহাম্মাদ তার অনুসারীদের ধীরে ধীরে মদিনায় স্থানান্তরিত হবার নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নিজেও হিজরত করেন। তাঁর (সাঃ)  মাক্কী জীবনের দাওয়াত ছিল শুধু তাওহীদের উপরে। তিনি ছিলেন রহমতের আলো যিনি দিনের দাওয়াত আবেগ ভরা কন্ঠে সকলের তরে পৌঁছে দিতেন। 

ইয়া রাসুলুল্লাহ কেন আপনাকে ভালোবাসি??

وَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ

অর্থঃ(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি।( সুরা: আল আম্বিয়া 107) আপনার ভালোবাসা কোটি কোটি মানুষের অন্তরে বিরাজমান। প্রতিটি মুহূর্তে পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় আপনার প্রশংসা সুললিত কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে। অথচ আপনি যখন আলোকরশ্মি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেন তখন অনেক নিঃসঙ্গ ও অসহায় ছিলেন। তরুন বয়স থেকেই আপনার যে উপস্থিত বুদ্ধি ছিল  সে গুণই আপনি একদিন রূপান্তরিত হলেন বিশ্বকালের সেরা নেতা হিসেবে। আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আজহাব, আয়াত: ২১)। প্রিয় হাবিব (সা:) কে একদিন একজন বৃদ্ধ সাহাবী এসে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব তখন রাসূল (সাঃ) ঠাট্টা করে বললেন বৃদ্ধ ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। সেই বৃদ্ধ সাহাবী অঝোরে কান্না করতে লাগলেন। রাসূল (সাঃ) বললেন জান্নাত প্রবেশ কালে সকলেই যৌবন ফিরে পাবে। তখন তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন।তিনি কখনোই ঠাট্টা করে হলেও মিথ্যা বলেননি। তাঁর সুভাসে সুভাষিত হতো প্রতিটি মানুষের অন্তর। যিনি বাড়ির ভিতরে যতটা ধৈর্যশীল ছিলেন বাইরেও ততটাই লাজুক ছিলেন। আপনার ঘামের সুগন্ধি – সুঘ্রাণে ভরে উঠত। হে প্রিয় রাসূল (সাঃ) যদি আপনার সান্নিধ্য পেতাম তাহলে নিজেকে খুব গর্ববোধ মনে করতাম। যদি আপনাকে দেখার একটু সৌভাগ্য পেতাম তাহল হৃদয় উজাড় করে শত আঘাত গুলো খুলে খুলে বলতাম। তিনি ছিলেন মধ্যম আকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী একটি মানুষ। যিনার ঠোঁটে লেগে থাকতো মুচকি হাসি।  তিনি যখন  মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা বলতেন শুধু মুখ নয় পুরো দেহটা ঘুরিয়ে কথা বলতেন।  ছোট থেকে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সহযোগী ছিলেন তিনাকে একদিন রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন আনাস তোমার কিছু চাই সেই ছোট্ট আনাস অনেক ভাবনা চিন্তা করে বলেন আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। হাবিব (সা:) বলেন। তাহলে বেশি বেশি সিজদায় লুটিয়ে পড়ো। রাসুল (সাঃ) এর প্রেম- প্রীতি তাঁদের হৃদয়ের স্পন্দনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গভাবে জড়িয়ে ছিল। যিনি ছিলেন সকলের প্রতি স্নেহ ও দয়াশীল। আপনার ভালোবাসা আমার ব্যথিত হৃদয়ে কান্নার আলোড়ন সৃষ্টি করে।

তাঁর সান্নিধ্য পেতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা দলে দলে ছুটে আসতেন। তিনি ছিলেন মানবতার আদর্শ। যিনার আদর্শ অনুকরণীয়।  যিনার চরিত্রের মাধুর্যতার জন্যে কাফের সম্প্রদায় আল আমিন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পড়োা এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (সূরা আল আহজাব, আয়াত: ৫৬)।

হজরত কাব ইবনে ওজারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেন, একদিন আমরা হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার ওপর আমরা কীভাবে দরুদ পড়ব?’ তিনি বললেন, ‘বলো, আল্লাহুম্মা সালি্ল আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ-কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’

অর্থাৎ: হে আল্লাহ, তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর এমন রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইবরাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ, তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইবরাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। (বোখারি ও মুসলিম)।

বিদায় হজ্জের ভাষণ!!

মহানবী (সাঃ) বিদায় হজের ভাষণে তার মহব্বতের উম্মতের জন্য যে শেষ অশ্রু বিসর্জন করেছেন তা আজও ভাস্কর হয়ে আছে। রাসূল (সাঃ) আশঙ্কাবোধ করতেন যে, ধণ  সম্পদ তোমাদের ঐক্যের বাধ ভেঙে না দেয়।এ কারণে তিনি বিদায় হজের খুতবা ঐক্যের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করলেন এবং পূর্ণ আবেগ সহ করে জানালেন। এবং বললেন দুর্বল কে অভিযোগ করার সুযোগ দিও না। এবং বিদায় হজ্জের শেষ খুতবায় তিনি পবিত্র জবানে আবেগ জড়িত কন্ঠে  বললেন আর মনে হয় আবার এখানে তোমাদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব না। সাহাবীদের সকলেই বুঝে গেলেন খুব শীঘ্রই আমাদের ইয়াতীম করে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে নিবেন। রাসূল (সাঃ) আরো বললেন বন্ধুগন: তোমরা কুরআন এবং হাদিস কে শক্ত ভাবে ধারণ করবে পথভ্রষ্ট হবেনা। একে অপরের প্রতি আনুগত্য করবে বিভেদ সৃষ্টি করবেনা। আমারা যাতে রাসুলের ভালোবাসা হৃদয়ে লালন করতে পারি আমীন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *