সাইয়্যিদ কুতুব এর জীবনের এক অনুপ্রেরণা ঘটনা

 

(তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়,

আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়)!

 সাইয়্যিদ কুতুবকে জেলখানার মাঝে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এমনকি এখনো কেউ বলতে পারবে না, তাঁর কবর কোথায় অবস্থিত!

যেদিন সাইয়্যেদ কুতুবকে হত্যা করা হলো, সেদিন মিশরের পথে পথে তাঁর রচিত তাফসীর ‘ফি যিলালিল কুরআন’ এর সাত অথবা আট হাজার সেট অর্থাৎ চৌষট্টি হাজার পুস্তক পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো।

রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যার কাছে সাইয়্যেদ কুতুবের গ্রন্থ পাওয়া যাবে, তাকে দশ বছর জেলে রাখা হবে। সাইয়্যেদ কুতুবের গ্রন্থগুলো জাদুর মতো। যে পাঠ করে, সেই তাঁর অনুসারী হয়ে যায়।

তার শাহাদাতের ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন দেশের বেতারের সম্প্রচারিত হলে সবার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিলো, এই ব্যক্তি কে? কেন তাকে ফাঁসি দেওয়া হলো?

সেই তাফসীর গ্রন্থটি কেমন যার কারণে তাকে ফাঁসি দেয়া হলো?

তখন বৈরুতের প্রকাশকেরা প্রকাশনা জগতে কোন খ্রিস্টান লোকসান খেলে তাকে বলতো আর তুমি যদি বাঁচতে চাও তাহলে সাইয়্যেদ কুতুবের ‘ফি যিলালিল💦 কুরআন’ ছাপ। হ্যাঁ, যে বছর সাইয়েদ কুতুবকে ফাঁসি দেওয়া হলো সে বছরই তার তাফসীর গ্রন্থটির সাত সংস্করণ ছাপা হলো।💦

অথচ তাঁর জীবদ্দশায় মাত্র একবার ছাপানো হয়েছিল।

আর এখন তো অবস্থা এমন যে, পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত পাওয়া যাবেনা যেখানে সাইয়্যেদ কুতুবের এই💦 তাফসীরগ্রন্থ গিয়ে পৌঁছে নি। এমন কোন ভাষাও পাওয়া যাবে না যে ভাষায় তা অনূদিত হয়নি।💦

[তাফসীরে সূরা তাওবা, শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিমাহুল্লাহ), পৃষ্ঠা ২৮৪]

ফাঁসির আগের রাতে সায়্যিদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ) কে কালিমা পড়ানোর জন্য জেলের ইমামকে পাঠানো হলো। জেলের ইমাম এসে সায়্যিদ কুতুবকে কালিমা পড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলেন।

তাকে দেখে সায়্যিদ কুতুব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী জন্য এখানে এসেছেন?

ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে আসামীকে কালিমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।

সায়্যিদ কুতুব বললেন, এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে? ইমাম বললেন, সরকার দিয়েছে।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এর বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান?

ইমাম বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই।

তখন সায়্যিদ কুতুব রহ.বললেন, কী আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান, সেই কালিমার ব্যখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে!

“তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়,
আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়!

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *