জাতি গঠনে সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে ইসলামী মূল্যবোধের ভূমিকা

 

 

জাতি গঠনে সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে ইসলামী মূল্যবোধের ভূমিকা


یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ  اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ  مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا
وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ 
اَکۡرَمَکُمۡ  عِنۡدَ اللّٰہِ  اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
﴿
۱۳

হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে
সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে
,পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি
বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে
, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার।তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর
নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন
, যে অধিক আল্লাহ-ভীরু। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। (সুরা : আল-হুজরাত , আয়াত : ১৩)

 

জাতি গঠনে সম্প্রীতি
বৃদ্ধিতে ইসলামী মূল্যবোধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামী মূল্যবোধ মানে ইসলামের শৃঙ্খলা, নৈতিকতা,
 এবং আদর্শের উদ্দীপনায় গঠিত ব্যক্তিগত ও সামাজিক ধারণা। ইসলামী মূল্যবোধ
ছাড়া কোনো জাতি সম্পূর্ণ রূপে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে পারেনা।

ইসলাম ধর্ম এমন সমস্ত মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত যা একজন
ব্যক্তিকে উন্নীত করে
,  তার নৈতিকতাকে পরিমার্জিত করে, তার আবেগকে উন্নত করে, তার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে।

ইসলামী মূল্যবোধ হচ্ছে শ্ৰেষ্ঠ মূল্যবোধ সর্ব কালের,  সময়ের ও স্থানের জন্য। ইসলামী মূল্যবোধ
হচ্ছে সেই নীতিমালা যা আল্লাহ্
 ও তার রাসূল মানতে উৎসাহিত কিংবা নিষেধ করেছেন। ইসলাম একটি সামাজিক ধারার
উপর নির্ভর করে
, যা মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও
সহযোগিতা বাড়ায়।

মানব সভ্যতায় সকল প্রকার মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ সেগুলি ইচ্ছাশক্তির সাথে
যুক্ত এবং খারাপ আচরণকে পরিবর্তন করে ভাল আচরণে রূপান্তরিত করার জন্য মূল্যবোধকে
সমাজের অগ্রগতির মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং ইসলাম একটি সমন্বিত সভ্যতামূলক
মূল্যবোধের একটি সেট যা জাতিকে উন্নত করে।

ইসলাম ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি, সম্মান,  ও ন্যায়ের মূল্য প্রচার করে। মানব আচরণকে সংগঠিত করার
নিয়ম হিসাবে আল্লাহ ও তিনার রাসূল যে মূল্যবোধের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সেগুলোই
সমাজ গঠন করে
,
 একটি জাতি গঠন করে।

      যদি আমরা প্রথমে দেখি ইসলামী সমাজ তার নীতিমালা, মূল্যবোধ এবং মহান চরিত্র দিয়ে বিজয় ও গৌরবের চূড়া অর্জন করেছিল যা ভালবাসা,  করুণা,  পরিচিতি,  স্নেহের মূল্যবোধ ছড়িয়ে
দেওয়ার পাশাপাশি সমস্ত হৃদয়কে একত্রিত করা
,
 তাদের থেকে ঘৃণা ও ভেদাভেদ দূর করা। তাদের মধ্যে সহানুভূতি
এবং ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করেছিল।

ইসলামে জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ
করেনা।মহান আল্লাহ বলেন
,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ
الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ
مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْراً وَّنِسَاءً
.

হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের কে একজন ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন।
এ দু’জন থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন
।(নিসা)

 তাহলে ইসলামে জাতিগত দিক দিয়ে মানব সন্তান এক ওপরে ভাই ভাই ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অনারবিদের ওপর আরব দেশের
লোকের
, আরব দেশের লোকের ওপর
অনারবিদের কোনো মর্যাদা নেই। কৃষ্ণাঙ্গের ওপর লাল বর্ণের লোকের
, লাল বর্ণের লোকের ওপর
কৃষ্ণাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সম্মান মর্যাদা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত
হবে।(মুসনাদে আহমদ)

ইসলাম অত্যন্ত আগ্রহী যে সকল মানুষের মধ্যে,  জাতি,  বর্ণ,  ভাষা বা মাতৃভূমির ভেদাভেদ
ছাড়াই ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বিরাজ করে এবং শ্রেণী ও অন্যদের মধ্যে বিবাদ বা
বিদ্বেষের কোন অবকাশ রাখেনা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যখন মদিনায় হিজরত করেন
,
 তখন তিনার প্রথম কাজ ছিল আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হৃদয়কে
একত্রিত করা
, যেহেতু তিনি আওস ও খাযরাজকে
তাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর একত্রিত করেছিলেন
, তাই তাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পায়, তাদের শত্রুতার অবসান ঘটে
এবং তারা ইসলামের সাথে প্রেমময় ভাই এবং ধর্মের সাথে পরিচিতি ও সমর্থক হয়ে ওঠে
এবং একটি উৎকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়।

যদি সহজ ও সাধারণ ভাষায় ইসলামী
মূল্যবোধ গুলোকে বলা যায় তাহলে অনেক এমন মূল্যবোধ আছে যেগুলো
জাতি গঠনে সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখে।

ইসলাম ধর্মের সাথে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হলো
প্রেম
ভালোবাসা। এটি নিজের প্রাণের সমান অন্যের প্রাণকে গৌরব করা ও সহানুভূতিতে
সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যে প্রেরণা করে।
এটি সমাজের মধ্যে ভালোবাসার
বাণী ছড়ায় এবং অনেক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।

ইসলামী মূল্যবোধের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সত্য।
সত্যের অনুসরণে সমাজের মধ্যে আদালত ও ইচ্ছা তৈরি হয়। সত্যের মূল্যায়নে দূর্নীতি
ও অসত্য নিষ্প্রয়োজন হয়।

ইসলামী মূল্যবোধের আরেকটি মূল্যবোধ হচ্ছে অন্যের অধিকার সংরক্ষণ
আল্লাহ বলেন
,  অতএব তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৮)

মহানবী (সা.) বলেছেন,
মুমিনদের মধ্যে উত্তম
ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী তারাই
, যারা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী।

     عَبْدِ  اللَّهِ 
بْنِ  عَمْرٍو  ـ  رضى  الله 
عنهما  ـ  قَالَ 
لَمْ  يَكُنِ  النَّبِيُّ 
صلى  الله  عليه 
وسلم  فَاحِشًا  وَلاَ 
مُتَفَحِّشًا  وَكَانَ  يَقُولُ 
   إِنَّ  
مِنْ   خِيَارِكُمْ   أَحْسَنَكُمْ   أَخْلاَقًا‏‏.‏

আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ‘আম্‌র (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ

 তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন
না। তিনি বলতেন
, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই
সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।  (সহিহ বুখারী)

ইসলামী মূল্যবোধের আরেকটি মূল্যবোধ হচ্ছে সুবিচার। আল্লাহ বলেন,  তোমরা সুবিচার করবে; এটা তাকওয়ার নিকটতর।’ (সুরা : মায়েদা,
আয়াত : ৮)

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হলো সহিষ্ণুতা ও সমতা। ইসলামে সহিষ্ণুতা
বাধ্যতামূলক। এটি সকল ধর্ম
,  ভাষা,  ও সংস্কৃতির মধ্যে সমানতা ও সম্পর্কে বিশ্বাসের ভাবনা তৈরি করে। সহিষ্ণুতা, সমানতা, ও প্রেমের ভাবনা ইসলামের
অমূল্য ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মূল্যবোধ অনুসরণ করে জাতি গঠনে সম্প্রীতি
এবং সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করে।

 ইসলাম শিক্ষা দেয়
সকলের মধ্যে সমতার ভাবনা এবং সহিষ্ণুতা প্রতি ব্যক্তির মধ্যে উন্নতির জন্যে।
সমাজের সমতা
ও সহিষ্ণুতা অনুসরণে জাতি গঠনে সম্প্রীতি ও একতা বৃদ্ধি পায়।

ইসলামী মূল্যবোধের ভূমিকা
জাতি গঠনে সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে একটি ব্যাপক ও গভীর প্রভাব বোধগম্য। ইসলাম ধর্মের
সিদ্ধান্ত ও শিক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম
, ভাষা, ও সংস্কৃতির মধ্যে সমবেদনা
ও সহযোগিতা উত্থানে অবদান রয়েছে। ইসলামে সমবেদনা
, সমানতা, ও সহিষ্ণুতার মূল্যায়ন
অবদান করে মানুষের মধ্যে মিতব্যয় ও ভালোবাসার বাণী ছড়ায়। এই মূল্যবোধের অনুসরণে
সমাজের সকল বর্গের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ইসলামের বিশ্বাসী
মানুষের মধ্যে অসংখ্য করে সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের
উন্নতি ও প্রগতির পথে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া মানবিক সম্প্রের
মাধ্যমে সমাজের সংহতি ও সম্মেলন বাড়ায়
,
যা সম্প্রীতি এবং
জাতি গঠনের সুনাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি দেয়। এইভাবে
, ইসলামী মূল্যবোধের অনুসরণে জাতি গঠনে সম্প্রীতি ও একতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, যা একটি নিরাপদ, সাম্প্রদায়িক, ও উন্নত সমাজ গঠনে সাহায্য করে।

ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধের আলোকে জাতি গঠনে সম্প্রীতি ও একতা
প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম ধর্মে প্রেম
, সমানতা, সহিষ্ণুতা, ও সম্মানের মূল্যবোধ
গুরুত্বপূর্ণ। এই মূল্যবোধের অনুসরণে জাতি গঠনে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা
করা হয়। ইসলাম ধর্মের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হলো সমতা। সমতা মানে সকল
মানুষের সমান অধিকার ও সুযোগ প্রদান করা। ইসলাম শিক্ষা দেয় সকলের মধ্যে সমানতার
ভাবনা এবং সম্মানের প্রতি ব্যক্তির মধ্যে উন্নতির জন্যে। সমাজের সমতা ও সহিষ্ণুতা
অনুসরণে জাতি গঠনে সম্প্রীতি ও একতা বৃদ্ধি পায়।

পরিশেষে বলব ইসলামী মূল্যবোধ এমন সমস্ত মূল্যবোধের সাথে সম্পর্কিত
যা জাতি গঠনে সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে অনেকটা ভূমিকা পালন করে আসছে।

Md Mostak Ahmed 

Research
Scholar



>

2 Comments

Leave a Reply to Anonymous Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *