ইসলামে নারীর মর্যাদা

ইসলামে নারীর মর্যাদা


ইসলামে নারীর মর্যাদা

এমনটা না যে ইসলাম ধর্ম শুধু নারীর মর্যাদা নিয়ে কথা বলে বরঞ্চ সব ধর্মই নারীর মর্যাদা নিয়ে কথা বলে কিন্তু ইসলাম ধর্ম যেভাবে নারীর মর্যাদা নিয়ে কথা বলে সেটা অন্য ধর্মে কম দেখতে পাওয়া যায়।।
ইসলামে নারীর মর্যাদা একটি সুশৃঙ্খল, ন্যায়সঙ্গত, এবং সম্মানজনক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে। ইসলাম নারীদেরকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদান করে। 
ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলাম  এমন একটি ধর্ম যেখানে নারীর অধিকার, মর্যাদা, এবং সুরক্ষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ইসলাম নারীদের কেবলমাত্র সম্মানিত করেছেন তা নয়, বরং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রদান করেছে। ইসলামে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত বর্তমান সমাজে যেখানে নারীদের অধিকারের প্রশ্ন বারবার উঠে আসে। যদি আমরা ইসলামের আগমনের পূর্বে (আইয়ামে জাহেলিয়াত) দেখি সেখানে আরব সমাজে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হতো, তাদের কোনো অধিকার ছিল না এবং তারা সমাজে অবহেলিত ছিল। এমনকি, কন্যা শিশুদের জীবিত অবস্থায় মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো নিষ্ঠুর প্রথাও সে যুগে ছিল প্রচলিত। ইসলামের আগমনের মাধ্যমে এই অমানবিক পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং নারীকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত করা হয়।
ইসলামে নারীকে মা হিসেবে এক সম্মান দিয়েছে তো কন্যা হিসেবে নারীর  আরেক সম্মান, বোন হিসেবে নারীর আরেক সম্মান, স্ত্রী হিসেবে নারীর আরেক সম্মান, বিধবা হিসেবে নারীর আরেক সম্মান। 
ইসলামে নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে, যা তাদের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করে:
 শিক্ষার অধিকার, আইনগত অধিকার, আর্থিক অধিকার, কর্মক্ষেত্রে অধিকার।

কুরআন হল ইসলামের মূল ধর্ম গ্রন্থ, যেখানে নারীর অধিকার এবং মর্যাদা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পুরুষ এবং নারীকে সমান মর্যাদায় সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয়ের জন্য সমান অধিকার নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা সূরা বাকারাতে বলেন : (هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ)  “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নারী এবং পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যারা একে অপরের মর্যাদা রক্ষা করে এবং সুরক্ষিত করে।

অন্যত্রে আল্লাহ তা’আলা বলেন “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন- যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে
অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ১৯)
হযরত মুহাম্মদ (সা.) নারীদের ব্যাপারে অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন: “পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” অন্য হাদীসে বলেন: “নারীদের সঙ্গে সদয় আচরণ করো।” অন্য আরেকটি হাদীসে বলেন “সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে তার স্ত্রীকে সর্বাধিক ভালোবাসে এবং সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করে।” যদি আমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর বিদায় হজ্জের ভাষণ দেখি সেখানে তিনি বিশেষ করে নারীদের অধিকার এবং মর্যাদা সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

বর্তমান সমাজে নারীর অধিকার এবং মর্যাদা সম্পর্কে প্রচুর আলোচনা হয়, তাদেরকে অনেক সময় বঞ্চিত লাঞ্ছিত করা হয়। অনেক সময় আমরা ইসলামের প্রদত্ত দিকনির্দেশনা এবং নারীর মর্যাদা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থেকে দূরে সরে যাই। ইসলাম নারীদের মর্যাদা এবং অধিকার রক্ষায় যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে, তা আমাদের সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। সমাজকে সচেতন করা জরুরি যে, ইসলাম নারীদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি কতটা গুরুত্বারোপ করে এবং এ বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব কী। এই সচেতনতা আমাদের সমাজকে আরও ন্যায়পরায়ণ, সম্মানজনক, এবং মানবিক করে তুলতে পারে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইসলামের শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, যদি আমরা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত করি, তাহলে সমাজে নারীরা তাদের যোগ্য সম্মান পাবে এবং একটি উন্নত ও সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে

More From Author

ছলনাময়ী

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি অনুভূতি ও ভালোবাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *